০৪:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চার শতাধিক চলচ্চিত্রের নায়ক প্রবীর মিত্রের বিদায়

  • রিপোর্টারে নাম:
  • আপডেটের সময় : ১২:২৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

সংগ্রহিত

বেশি সময় ধরে চলা এক বিস্ময়কর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটালেন প্রবীর মিত্র। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই কিংবদন্তি অভিনেতা সোমবার চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন। এফডিসি, যে স্থান তাঁর জীবনের বহু স্মৃতি ধারণ করে, সেখানেই শেষবার এলেন তিনি। তবে এবারের উপস্থিতি ছিল ভিন্ন—ফ্রিজার ভ্যানে নিথর দেহে।

জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে এফডিসি প্রাঙ্গণে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সহকর্মী হিসেবে আসেন চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগরসহ বর্তমান প্রজন্মের তারকা ইমন, বাপ্পীরা। জানাজার আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবীর মিত্রের বড় ছেলে মিথুন জানাজায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বাবার কোনো কথা বা আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে দয়া করে মাফ করে দেবেন।’ তিনি আরও জানান, প্রবীর মিত্র বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁর মুসলিম নাম ছিল হাসান ইমাম।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘দাদা ছিলেন আমাদের মুরব্বি। তাঁর কাছ থেকে আমরা শিখেছি কীভাবে সিনিয়রদের সম্মান করতে হয়। দয়া করে সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’

চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিদায় প্রবীর মিত্র, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে আপনি চিরজাগ্রত।

চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র প্রবীর মিত্রের বিদায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর অভিনয়গুণে দর্শকদের মুগ্ধ করে গেছেন। এফডিসিতে তাঁর মরদেহ দেখার জন্য সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় ছিল তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

তাঁর বড় ছেলে মিথুনের কথায় উঠে এসেছে প্রবীর মিত্রের বিনয়ী ব্যক্তিত্ব ও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ। ইসলামের প্রতি তাঁর বিশ্বাস এবং নতুন নাম গ্রহণের বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা ছিল, যা আজ প্রকাশিত হলো।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরসহ অন্যান্য সহকর্মীর বক্তব্যে বোঝা যায়, প্রবীর মিত্র শুধু একজন ভালো অভিনেতাই নন, একজন গুণী মানুষ এবং সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তাঁর অবদান ও শিক্ষাগুলো নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

প্রবীর মিত্রের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর কাজ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে।

প্রবীর মিত্রের জানাজায় ইলিয়াস কাঞ্চনের স্মৃতিচারণা, বাপ্পীর ক্ষোভ:-

জানাজা শেষে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘নিরহংকারী মানুষ ছিলেন তিনি। কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি তাঁকে। খুবই নরম ভাষায় কথা বলতেন। তাঁকে হারানোর ক্ষত পূরণ হওয়ার নয়। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। এখনো যাঁরা সিনিয়র শিল্পী বেঁচে আছেন, তাঁদের জন্যও দোয়া রাখবেন।’

তবে এদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। প্রবীর মিত্রের জানাজায় মানুষের ভিড় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ এত মানুষ, মিডিয়া, শোবিজের লোকজন দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কিন্তু উনি জীবিত থাকাকালীন জন্মদিন বা বিশেষ দিনগুলোতে কজন তাঁর খোঁজ নিয়েছি? এই যে আমরা “চলচ্চিত্র পরিবার” বলি, আমি সেটা নিয়ে সন্দিহান।’

বাপ্পী আরও বলেন, ‘উনার মতো মানুষরা জীবনের শেষ সময়গুলো অনেকটাই একা কাটান। তখন যদি আমরা পাশে দাঁড়াতাম, সেটা হয়তো তাঁদের জন্য বড় সান্ত্বনা হতো। আজকের ভিড়টা যদি তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে হতো, তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালো একটা দৃষ্টান্ত রাখতে পারতাম।’

প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন যেন এক শূন্যতার মুখোমুখি। তবে এই বিদায় স্মরণ করিয়ে দেয় জীবিত কিংবদন্তিদের যথাযথ সম্মান ও যত্নের গুরুত্ব।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনর ই-মেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

লেখক সম্পকে তথ্য

রৌমারীতে মউশিক শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন

বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধের ২৫ বছর: বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধে শহীদ বীরদের প্রতি রৌমারীর গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আহতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা

চার শতাধিক চলচ্চিত্রের নায়ক প্রবীর মিত্রের বিদায়

আপডেটের সময় : ১২:২৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৫

বেশি সময় ধরে চলা এক বিস্ময়কর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটালেন প্রবীর মিত্র। পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া এই কিংবদন্তি অভিনেতা সোমবার চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন। এফডিসি, যে স্থান তাঁর জীবনের বহু স্মৃতি ধারণ করে, সেখানেই শেষবার এলেন তিনি। তবে এবারের উপস্থিতি ছিল ভিন্ন—ফ্রিজার ভ্যানে নিথর দেহে।

জোহরের নামাজের পর জানাজা শেষে এফডিসি প্রাঙ্গণে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সহকর্মী হিসেবে আসেন চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জ্বল, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগরসহ বর্তমান প্রজন্মের তারকা ইমন, বাপ্পীরা। জানাজার আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবীর মিত্রের বড় ছেলে মিথুন জানাজায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার বাবার কোনো কথা বা আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে দয়া করে মাফ করে দেবেন।’ তিনি আরও জানান, প্রবীর মিত্র বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁর মুসলিম নাম ছিল হাসান ইমাম।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘দাদা ছিলেন আমাদের মুরব্বি। তাঁর কাছ থেকে আমরা শিখেছি কীভাবে সিনিয়রদের সম্মান করতে হয়। দয়া করে সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।’

চলচ্চিত্রে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিদায় প্রবীর মিত্র, চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে আপনি চিরজাগ্রত।

চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র প্রবীর মিত্রের বিদায় চলচ্চিত্রাঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি তাঁর অভিনয়গুণে দর্শকদের মুগ্ধ করে গেছেন। এফডিসিতে তাঁর মরদেহ দেখার জন্য সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় ছিল তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

তাঁর বড় ছেলে মিথুনের কথায় উঠে এসেছে প্রবীর মিত্রের বিনয়ী ব্যক্তিত্ব ও মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রমাণ। ইসলামের প্রতি তাঁর বিশ্বাস এবং নতুন নাম গ্রহণের বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছেই অজানা ছিল, যা আজ প্রকাশিত হলো।

শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরসহ অন্যান্য সহকর্মীর বক্তব্যে বোঝা যায়, প্রবীর মিত্র শুধু একজন ভালো অভিনেতাই নন, একজন গুণী মানুষ এবং সবার শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তাঁর অবদান ও শিক্ষাগুলো নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

প্রবীর মিত্রের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর কাজ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার মাধ্যমে।

প্রবীর মিত্রের জানাজায় ইলিয়াস কাঞ্চনের স্মৃতিচারণা, বাপ্পীর ক্ষোভ:-

জানাজা শেষে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্রকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘নিরহংকারী মানুষ ছিলেন তিনি। কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি তাঁকে। খুবই নরম ভাষায় কথা বলতেন। তাঁকে হারানোর ক্ষত পূরণ হওয়ার নয়। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। এখনো যাঁরা সিনিয়র শিল্পী বেঁচে আছেন, তাঁদের জন্যও দোয়া রাখবেন।’

তবে এদিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। প্রবীর মিত্রের জানাজায় মানুষের ভিড় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজ এত মানুষ, মিডিয়া, শোবিজের লোকজন দেখে আমি অবাক হচ্ছি। কিন্তু উনি জীবিত থাকাকালীন জন্মদিন বা বিশেষ দিনগুলোতে কজন তাঁর খোঁজ নিয়েছি? এই যে আমরা “চলচ্চিত্র পরিবার” বলি, আমি সেটা নিয়ে সন্দিহান।’

বাপ্পী আরও বলেন, ‘উনার মতো মানুষরা জীবনের শেষ সময়গুলো অনেকটাই একা কাটান। তখন যদি আমরা পাশে দাঁড়াতাম, সেটা হয়তো তাঁদের জন্য বড় সান্ত্বনা হতো। আজকের ভিড়টা যদি তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে হতো, তাহলে হয়তো আমরা আরও ভালো একটা দৃষ্টান্ত রাখতে পারতাম।’

প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন যেন এক শূন্যতার মুখোমুখি। তবে এই বিদায় স্মরণ করিয়ে দেয় জীবিত কিংবদন্তিদের যথাযথ সম্মান ও যত্নের গুরুত্ব।