
আব্দুল খালেক রৌমারী প্রতিনিধি, বিজয়ের আলো
১৮ এপ্রিল ২০২৫, কুড়িগ্রাম
“ওয়াহিদ, কাদের, মাহফুজ শহীদদের—আমরা তোমায় ভুলি নাই”—এই শ্লোগানে গভীর শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেমের আবহে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় পালিত হলো ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তি।
২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিডিআর ও গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রতিরোধে প্রাণ উৎসর্গ করেন বাংলাদেশের তিন সাহসী সেনা। সেই দিনটিকে স্মরণ করে ‘বড়াইবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে প্রতিবছর।
শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভা
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। আয়োজক ছিল বড়াইবাড়ী দিবস উদযাপন কমিটি। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেন সাবেক সংসদ সদস্য রুহুল আমিন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন:
- সাবেক এমপি রুহুল আমিন
- বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্প
- কলাবাড়ি বিবিসি উচ্চ বিদ্যালয়
- বারবান্দা সূর্য্য সংঘ
- শহীদ পরিবার
- চুলিয়ারচর ও বারবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম
- স্থানীয় গ্রামবাসী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা
- বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন—
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ও বক্তারা ছিলেন:
- কর্নেল মো. জয়নাল আবেদীন (অব.)
- প্রফেসর তসলিম উদ্দিন, সাবেক অধ্যক্ষ, আনন্দ মোহন কলেজ
- নায়েব মেজর (অব.) এম. ডি. জামাল
- আলহাজ্ব আজিজুর রহমান, সাবেক আহ্বায়ক, রৌমারী উপজেলা বিএনপি
- লুৎফর রহমান, অফিসার ইনচার্জ, রৌমারী থানা
- আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যান, রৌমারী সদর ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক
- মোস্তাফিজুর রহমান রঞ্জু, সদস্য সচিব, উপজেলা বিএনপি
- হায়দার আলী, সাবেক অধ্যক্ষ ও উপজেলা জামায়াতের আমির
- মোস্তাক আলী, সাবেক আমির, উপজেলা জামায়াত
- মোকলেছুর রহমান, আহ্বায়ক, রাজীবপুর উপজেলা বিএনপি
- মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, যুগ্ম আহ্বায়ক, উপজেলা বিএনপি
- নুর আলম খান হিরো, যুগ্ম আহ্বায়ক, উপজেলা বিএনপি
- রবিউল ইসলাম রানা, সদস্য সচিব, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল
- স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ
বড়াইবাড়ী যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পটভূমি:
২০০১ সালের এই দিনে বিএসএফ হঠাৎ করে কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ী গ্রামে অবৈধভাবে প্রবেশ করে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। তবে তৎকালীন বিডিআর ও গ্রামবাসীরা অসীম সাহসিকতায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে বাংলাদেশের তিন বীর সৈনিক শহীদ হন:
- ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদুজ্জামান (৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়ন)
- সিপাহী মাহফুজার রহমান (৩৩ রাইফেল ব্যাটালিয়ন)
- সিপাহী আব্দুল কাদের (২৬ রাইফেল ব্যাটালিয়ন)
এই যুদ্ধে ভারতের বিএসএফ-এর ১৬ সদস্য নিহত হয়।
এলাকাবাসীর দাবি:
- শহীদদের নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ
- চলমান সেতু ও সড়কের নামকরণ শহীদদের নামে
- ‘বড়াইবাড়ী দিবস’-কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান
এটি শুধু স্মরণ নয়, এক আত্মপরিচয়ের উদ্যাপন—যা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা ও দায়িত্ববোধের বার্তা দেয়।